কিশোরগঞ্জ জেলা প্রবাসী কল্যাণ ফাউন্ডেশন (Kishoreganj District Expatriate Welfare Foundation)
গঠনতন্ত্র (Constitution)
অনুচ্ছেদ ১: নাম ও পরিচিতি
১.১ এই সংস্থার নাম হবে “কিশোরগঞ্জ জেলা প্রবাসী কল্যাণ ফাউন্ডেশন”।
১.২ এটি একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক এবং স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন।
অনুচ্ছেদ ২: লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ফাউন্ডেশনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ:
২.১ প্রবাসীদের কল্যাণ: কিশোরগঞ্জ জেলার প্রবাসীদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বিক সুবিধা, অসুবিধা, অধিকার ও কল্যাণে কাজ করা।
২.২ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের সঠিক ব্যবহার এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
২.৩ সেবামূলক কার্যক্রম: অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্বাবলম্বীকরণে সহায়তা প্রদান।
২.৪ সেতুবন্ধন: প্রবাসীদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ঐক্য স্থাপন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের একটি শক্তিশালী সেতুবন্ধন তৈরি করা।
অনুচ্ছেদ ৩: কার্যক্ষেত্র
৩.১ ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যক্ষেত্র হবে কিশোরগঞ্জ জেলা এবং প্রয়োজনে দেশের বাইরেও প্রবাসীদের সাথে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
অনুচ্ছেদ ৪: সদস্যপদ
৪.১ সাধারণ সদস্য: কিশোরগঞ্জ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা এবং প্রবাসী যারা ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সমর্থন করেন এবং নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করেন, তারা সাধারণ সদস্য হতে পারবেন।
৪.২ আজীবন সদস্য: এককালীন নির্ধারিত অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে আজীবন সদস্য হওয়া যাবে।
৪.৩ সম্মানিত সদস্য: ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে সম্মানিত সদস্য করা যেতে পারে।
৪.৪ সদস্যপদ বাতিল: গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপ, নৈতিক স্খলন অথবা নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধে ব্যর্থ হলে কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে সদস্যপদ বাতিল হতে পারে।
অনুচ্ছেদ ৫: কার্যনির্বাহী কমিটি
৫.১ ফাউন্ডেশনের সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হবে।
৫.২ কমিটির সদস্য সংখ্যা, মেয়াদ এবং নির্বাচন পদ্ধতি উপবিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে।
৫.৩ কার্যনির্বাহী কমিটি ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর করবে।
অনুচ্ছেদ ৬: তহবিল
৬.১ সদস্যদের মাসিক/বার্ষিক চাঁদা, অনুদান, সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য, প্রকল্পভিত্তিক অর্থায়ন এবং বৈধ বিনিয়োগ থেকে ফাউন্ডেশনের তহবিল সংগ্রহ করা হবে।
৬.২ সকল আর্থিক লেনদেন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে এবং বার্ষিক নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
অনুচ্ছেদ ৭: গঠনতন্ত্র সংশোধন
৭.১ কার্যনির্বাহী কমিটির প্রস্তাব এবং সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা যাবে।
অনুচ্ছেদ ৮: বিলুপ্তি
৮.১ যদি কোনো কারণে ফাউন্ডেশন বিলুপ্তির প্রয়োজন হয়, তবে কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে এবং সাধারণ সভার অনুমোদনক্রমে তা করা যাবে। বিলুপ্তির ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের সকল সম্পদ জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত অন্য কোনো সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রবাসী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম (Activities)
ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে নিম্নলিখিত কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হবে:
১. স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সহায়তা
• অসহায়দের স্বাস্থ্যসেবা: দুস্থ ও অসহায় প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের এবং স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ, ঔষধ বিতরণ ও স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন।
• “প্রবাসী ড্রিম ক্লিনিক/হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা: প্রবাসীদের এবং স্থানীয়দের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি মানসম্মত ক্লিনিক বা ছোট হাসপাতাল স্থাপন, যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।
২. স্বাবলম্বী প্রকল্প
• দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ: প্রবাসে ফেরত আসা কর্মীদের এবং স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য বিভিন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা (যেমন: কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ, সেলাই, ড্রাইভিং ইত্যাদি)।
• ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ সহায়তা: প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের এবং আগ্রহী প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রাথমিক মূলধন বা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা।
৩. শিক্ষা সহায়তা ও বৃত্তি প্রদান
• শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ: কিশোরগঞ্জ জেলার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ, স্কুল ব্যাগ, পোশাক ইত্যাদি বিতরণ করা।
• “প্রবাসী শিক্ষা বৃত্তি” প্রদান: প্রবাসীদের মেধাবী সন্তানদের এবং স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য শিক্ষা বৃত্তি প্রদান।
• মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু: প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তায় একটি মানসম্মত স্কুল বা কলেজ স্থাপন করা, যেখানে আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি ও পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
৪. মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রম
• “সবার জন্য কোরবানি” প্রকল্প: প্রতি বছর ঈদুল আযহায় প্রবাসীদের অর্থায়নে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণের ব্যবস্থা করা।
• দুর্যোগকালীন সহায়তা: বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা।
• প্রতিটি উপজেলার গরীব-দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো: স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে প্রতিটি উপজেলায় দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে সহায়তা করা।
৫. প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সহায়তা
• প্রবাসীদের সুবিধা ও অসুবিধায় পাশে দাঁড়ানো ও সহযোগিতা করা: প্রবাসে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে (যেমন: আইনি জটিলতা, চাকরির সমস্যা, মৃত্যু ইত্যাদি) তাদের পরিবারকে সহায়তা করা এবং প্রয়োজনে দূতাবাস বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগে সহযোগিতা করা।